ময়মনসিংহের বন্যায় প্রভাব ফেলতে পারে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায়

খাদ্য উৎপাদনে যে কয়টি জেলা মোটামুটি স্বয়ংসম্পুর্ন এবং নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও পার্শ্ববর্তি অন্যদের চাহিদা মিটাতে পারে তাদের মাঝে অন্যতম বৃহত্তর ময়মনসিংহ। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুসারে দেশের মোট খাদ্য চাহিদার প্রায় ১০% এ অঞ্চল থেকেই পুরণ করা সম্ভব। অঞ্চলের চারটি জেলা ময়মনসিংহ, জামালপুর,শেরপুর ও নেত্রকোনার উৎপাদিত কৃষিপণ্য দেশের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে।
কৃষি অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী গত ২৩-২৪ অর্থবছরে এ অঞ্চলে মোট খাদ্য উৎপাদন ছিলো ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫০ টন। বিপরীতে চাহিদা ছিলো মাত্র ১৮ লাখ ৭ হাজার ২৩৩ টন। উদ্বৃত্ত প্রায় ২৬ লাখ ৮১ হাজার ৭১৭ টন খাবার দেশের চাহিদা মিটাতে ভূমিকা রেখেছে। তবে, এ বছর আকস্মিক বন্যার কবলে পরে উদ্বৃত্ব থাকা এ অঞ্চলের নষ্ট হয়ে যাওয়া ফসলের প্রভাবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এবার এ অঞ্চলের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শেরপুর জেলা। এ বছর সীমান্ত জেলাটির ৯৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছিল। তার মধ্যে ৩৭ হাজার ১৫৫ হেক্টরই উজানের ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। নেত্রকোনা জেলার ১০টি উপজেলায় এ বছর ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়। এর মধ্যে বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় ২৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর আমন খেত ও ১৭৭ হেক্টর জমির শাকসবজি। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার সীমান্ত ও নিম্নাঞ্চল কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, পূর্বধলা, মোহনগঞ্জ, আটপাড়া ও মদন। অথচ এ অঞ্চল পুরোপুরিভাবেই কৃষিনির্ভর। এছাড়া ময়মনসিংহের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ৫৬০ হেক্টর রোপা আমনের জমি নষ্ট হয়েছে ধোবাউড়া উপজেলায়। ১০ হাজার ৩১০ হেক্টর আমনের জমি নষ্ট হয়েছে হালুয়াঘাটে। ফুলপুর উপজেলায় নষ্ট হয়েছে ৩ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমির আমন ধান।
বিগত বন্যায় প্লাবিত হয়েছে এ অঞ্চলের গোটা উত্তরাঞ্চল। ফলে, আমনের পাশাপাশি নষ্ট হয়েছে সবজির টাল ও মাছের ঘের। ক্ষতির মুখে পরেছেন হাজারো কৃষক ও মৎস চাষী। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যার আনুমানিক ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। তবে স্থায়ীনরা বলছেন এ ক্ষতির পরিমান আরও অধিক। এমন পরিস্থিতিতে ধরে নেয়া হচ্ছে এ বছর দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কিছুটা প্রভাব পরবে।